সময়ের সাথে সাথে মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজ

মায়ের কোল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মা যদি থাকেন সুশিক্ষিত, নৈতিকতা সম্পন্ন তবে তার সন্তানও তাই হবে। আর নারী জাতিকে সুশিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যে ১৯৯১ সালের ১৭ অক্টোবর নূরজাহান রোডের উত্তর পাশে নারী শিক্ষার জন্য নির্ধারিত স্থানে ০.৮০ একর জমির উপর স্থাপিত হয় ‘মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজ’। টিনশেড ঘরে ৩৪ জন ছাত্রী নিয়ে শুরু হয় কলেজের উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা জনাব এহসানুল হক সেতু এবং কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ জনাব সাহিদুন নাহার । ১৯৯৪ সালে কলেজটি এম.পি.ও ভুক্ত হয়। একই সময়ে কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রী (পাস) কোর্স চালু করা হয় এবং ১৯৯৬ সালে চালু হয় ছাত্রী হোস্টেল। ১৯৯৭ সাল থেকে কলেজে চালু হয় অনার্স কোর্স। ২০১8 সালে চালু হয় মাস্টার্স কোর্স এবং ২০২৩ সালে চালু হয় বিবিএ ও সিএসই প্রফেশনাল কোর্স।

২০০৯ সাল থেকে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব নেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী এ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক-এম.পি। তিনি ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সফলভাবে অত্র কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁকে সভাপতি পাবার পর থেকে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, কর্মচারী ও শিক্ষকগণের মধ্যে নতুন আশার সৃষ্টি হয়। সভাপতি মহোদয়ের তড়িৎ সিদ্ধান্তের ফলে অল্প সময়ের ব্যবধানে কলেজের আর্থিক ভিত্তি মজবুত হতে থাকে এবং শিক্ষকদের মাসিক বেতন নিয়মিতকরণ করা হয়। কলেজে ক্লাশ রুমের সংকট সমাধানের লক্ষ্যে সভাপতি মহোদয় সকল আধুনিক সুবিধাসহ ৮ তলা নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা নেন। বর্তমানে তিনি আমাদের কলেজের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।

১৪/১১/২০১৭ তারিখ সকাল ০৯:০০ টায় বিধি মোতাবেক এই কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে আমি যোগদান করেছি। যোগদানের তারিখে অনুষ্ঠিত শিক্ষক পরিষদের সভায় ন্যায় ও সত্যের পথ অনুসরণ করে ইতিবাচক আচরণ বা কর্মকান্ডের মাধ্যমে আমাদের কলেজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়। একে অপরের সমালোচনা না করে এবং কোনও দলাদলি না করে কলেজের স্বার্থে একটি পরিবারের ন্যায় সকলে মিলে কলেজকে এগিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় শতভাগ সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে ৮/১০ জন ছাত্রীকে একজন গাইড শিক্ষকের তত্বাবধানে দায়িত্ব দেয়া হয়। গাইড শিক্ষক ছাত্রীদের সমস্যার কথা শুনেন এবং সমাধানের চেষ্টা করেন। প্রতিটি ছাত্রীর ক্লাশে ও পরীক্ষায় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সজাগ থাকেন। মাস্টার্স, অনার্স ও পাস কোর্সের ছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিষয় শিক্ষকগণ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন। গাইড শিক্ষক/বিষয় শিক্ষক সমস্যার সমাধান না দিতে পারলে অধ্যক্ষ বিষয়টি অবগত হয়ে সমাধান দিয়ে থাকেন।

 :

বর্তমানে কলেজে যেসব কোর্স চালু রয়েছে সেগুলো হলো:

  উচ্চমাধ্যমিক :

মানবিক, বিজ্ঞান এবং ব্যবসায় শিক্ষা

 
  স্নাতক (পাস) : বি.এ; বি.এস.এস; বি.এসসি এবং বি.বি.এস  
  স্নাতক (সম্মান) :

হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং, ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকর্ম এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি

 
  স্নাতক (সম্মান) প্রফেশনাল : বিবিএ এবং সিএসই  
  স্নাতকোত্তর    :

হিসাববিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞান

 

 :

কলেজের কর্মচারী, শিক্ষক, প্রশাসন সহযোগী কমিটি, অধ্যক্ষসহ সকলে একমত হয়েছি ‘We Feeling’ নিয়ে কাজ করার। গভর্নিং বডির সাবেক মাননীয় সভাপতি (বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা) এ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক-এম.পি’র দিক নির্দেশনা ও গভর্নিং বডির অন্য সকল সদস্যের পরামর্শ মোতাবেক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সকলে যার যার অবস্থানে থেকে নতুন উদ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন। শিক্ষক, কর্মচারী, ছাত্রী, অভিভাবক, এলাকাবাসী এবং অন্য সকলে মিলে নিকট ভবিষ্যতে আমরা এই কলেজকে ঢাকা শহরের অন্যতম নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি।

বর্তমান সময়ে কলেজে ছাত্রীদের শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্রেণি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য নতুন বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল, স্মার্ট বোর্ড, হোয়াইট বোর্ড, সাউন্ড সিস্টেম, সিসিটিভি ক্যামেরা, শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ (এসি), কম্পিউটার ল্যাব, বৈদ্যুতিক পাখা, নতুন বই, লাইব্রেরীর উন্নয়ন প্রভৃতি কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ফলে ক্লাসে ছাত্রীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে, তারা আগ্রহের সাথে ক্লাস করছে। পড়াশোনা শেষে তারা সফলভাবে কর্মজীবন শুরু করতে পারছে। শিক্ষকগণের জন্য বিষয়ভিত্তিক পৃথক ডিপার্টমেন্ট ও পর্যপ্ত বই পুস্তকসহ সেমিনার তৈরি করা হয়েছে। AC সহ শিক্ষক পরিষদে বসার জন্য নতুন চেয়ার, টেবিল দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়েছে নতুন বুক সেলফ, একাডেমিক কাউন্সিল, নতুন আলমীরা ও নতুন বই। ফলে তাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ছে যা নারীর উচ্চ শিক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলছে। কানেকটিভিটি ও নেটওয়াকিং এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল পাবার উপযোগী যোগ্য ও দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলা পুরোপুরি সফল হবে বলে আশা করা যায়।

জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৩ এ মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আমিনুল হক জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় মোহাম্মদপুর থানার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান (শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ) নির্বাচিত হয়েছেন। একই বছরে এই প্রতিষ্ঠান ঢাকা শহরের প্রতিষ্ঠানের উপর জরিপের প্রেক্ষিতে ‘A’ ক্যাটাগরিভুক্ত হয়েছে। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা (সদ্য বিদায়ী সভাপতি) এ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক-এম.পি এর প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে এই প্রতিষ্ঠানে বিগত কয়েক বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলশ্রুতিতে মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজ নারীর উচ্চ শিক্ষার জন্য বর্তমানে একটি মডেল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে।

আমরা স্বপ্ন দেখি আগামীর মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজে সময় উপযোগী সকল বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু হবে। ছাত্রীদের কোলাহলে মুখরিত থাকবে কলেজ ক্যাম্পাস। ছাত্রী-শিক্ষকের কর্ম চাঞ্চল্যে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট থাকবে কলেজ ক্যাম্পাস। এ প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে বেড়িয়ে যাবে ছাত্রীরা এবং পারিবারিক জীবন, কর্মজীবনে নৈতিকতার সাথে তার শিক্ষার সফল প্রয়োগ করবে। আর এভাবেই সে পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখবে।

মূল্যবোধ সম্পন্ন আদর্শ মানুষ গড়ে তোলাই আমাদের অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকার রক্ষার্থে গভর্নিং বডি, শিক্ষক-কর্মচারী, অভিভাবক, স্থানীয় জনগণ ও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মিলে মিশে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা রাখি আমাদের প্রতিষ্ঠান শীঘ্রই বাংলাদেশের সেরা নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে- ইনশাল্লাহ।

অধ্যক্ষ, মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজ।
...
...
...
...